চিকিৎসকদের অনিয়মে স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত

ভেদরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ চিকিৎসকদের অনিয়ম দুর্নীতি আর অবহেলার ফলে ভেদরগঞ্জের ৫০ শয্য বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অফিস চলাকালীন সময়ে রোগীদের কাছ থেকে ভিজিট নেয়া, নির্দিষ্ট সময়ে হাসপাতালে না আসা, জরুরী বিভাগে চিকিৎসা দিয়ে টাকা আদায় ও হাসপাতালের রোগীদের রেখে বেসরকারী ক্লিনিকে রোগী দেখা সহ  চিকিৎকদের নানামূখী অনিয়মে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারন জনগন। তাছাড়া হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, কোম্পানীর মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিভ ও দালালদের দৌরাত্মের কারনে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পোহাতে হয় সীমাহীন ভোগান্তি।
জানাগেছে, ভেদরগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তরুন সাহা ,উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মেঘনাধ সাহা, মাসুম বিল্লাহ, আলমগীর হোসেন সহ মোট ৭ জন ডাক্তার নিয়োগ প্রাপ্ত থাকলেও বর্তমানে সেখনে ৫ জন ডাক্তার কর্মরত রয়েছেন। বাকী ২জন ডাক্তারের মধ্যে একজন ছুটিতে আরেকজন ডেপুটেশনে অন্যত্রে কর্মরত আছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি নানা সমস্যায় জর্জরিত রয়েছে। হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে ৬টি করে ফ্যান থাকার কথা থাকলেও নেই। তাছাড়া যেগুলো রয়েছে তার বেশীর ভাগই অকার্যকর। ফলে প্রচন্ড গরমে অতিষ্ট হয়ে পড়ে রোগীরা। হাসপাতালের চারপাশে রয়েছে অনেক ঝোঁপঝাড়। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকে হাসপাতালের সামনে। তাছাড়া হাসপাতালের বেডে ভর্তি রোগীদের তেমন খোঁজ খবর নেয়া হয়না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত ডাক্তার রয়েছেন মো. আলমগীর হোসেন। জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা প্রতিটি রোগীর কাছ থেকে তিনি ১৫০-২০০ টাকা করে আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া অফিস চলাকালীন সময়ে হাসপাতালের রোগীদের রেখে তিনি পাশে অবস্থিত মর্ডান ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারে রোগী দেখেন বলেও অভিযোগ করেন রোগীরা।
চরকুমারিয়া ইউনিয়ন থেকে চিকিৎসা নিতে আসা ইমান মিয়া বলেন, জরুরী বিভাগে আমার নাতিকে দেখানোর পর আলমগীর ডাক্তার ১৫০ টাকা নিয়েছে। আমরা আগে থেকেই তার কাছে চিকিৎসা নেই। দূর থেকে এসেছি কি করবো!
মহিষার ইউনিয়নের রাকিব মিয়া বলেন, পায়ে পেরেক ডুকেছে তাই আলমগীর ডাক্তারকে দেখিয়েছি। কিন্তু অফিস চলাকালীন সময়ে সকাল ১১টার দিকে  মর্ডান হাসপাতালে তিনি আমাকে চিকিৎসা দিয়েছেন। ৩শ টাকা ভিজিটও নিয়েছেন।
বিষয়টি অস্বীকার করে ডাক্তার আলমগীর হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে  মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। অফিস চলাকালীন সময়ে আমি কোন বেসরকারী ক্লিনিকে রোগী দেখিনা। চিকিৎসার বিনিময়ে আমি কারো কাছ থেকে কোন টাকা গ্রহন করিনি।
কিন্তু মর্ডান ক্লিনিকের রিসিপশন থেকে জানানো হয়, ডাক্তার আলমগীর হোসেন প্রতি মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে রোগী দেখেন।
এ হাসপাতালে দায়িত্বরত আরেক ডাক্তার মো. মাসুম বিল্লাহ অফিস চলকালীন সময় রোগীদের কাছ থেকে ভিজিট আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। চিকিৎসার জন্য আসা লোকজনের অভিযোগ, ব্যবস্থাপত্র বাবদ তিনি প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে ২শ টাকা করে আদায় করেন ।
ডিএমখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা কবির সরকার বলেন, সরকারি হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসা দেয়ার নিয়ম থাকলেও এখানের ডাক্তাররা চিকিৎসার বিনিময়ে টাকা আদায় করেন। আমার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ডাক্তার মাসুম বিল্লাহ আমার কাছ থেকে ২শ টাকা নিয়েছে।
নাজমা বেগম বলেন, ঔষধ লিখার বিনিময়ে ডাক্তার মাসুম বিল্লাহ আমার কাছ থেকে ২শ টাকা নিয়েছে।
তবে ডাক্তার মাসুম বিল্লাহ বলেন, চিকিৎসার বিনিময়ে আমি কারো কাছ থেকে কোন টাকা আদায় করিনি। রোগীরা আপনাদেরকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে।
তাছাড়া ডা. তরুন সাহা ও মেঘনাদ সাহার বিরুদ্ধেও রয়েছে নানামূখী অভিযোগ।
এ বিষয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মেঘনাধ সাহা বলেন, এ পর্যন্ত কোন রোগী আমার কাছে এ ধরনের অভিযোগ করেনি। তবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
শরীয়তপুর জেলার সিভিল সার্জন ডাক্তার খলিলুর রহমান বলেন, অফিস চলাকালীন সময়ে কোন ডাক্তার রোগীর কাছ থেকে টাকা নিতে পাররেনা এমনকি প্রাইভেট ক্লিনিকেও রোগী দেখাতে পারবেনা। এ ক্ষেত্রে আমার পক্ষ থেকে কড়া নির্দেশ রয়েছে। এ বিষয়ে কোন তথ্য প্রমান দিতে পারলে আমার পক্ষ থেকে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

No comments