কাদেরের ঐক্যের আহ্বানে সিপিবি-বাসদের ‘না’

সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, “আগে বিএনপিও দুঃশাসন করেছে, এখন আওয়ামী লীগের দুঃশাসন। এই দুই দলের সঙ্গে আমাদের ঐক্য হবে না।”
বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেছেন, “ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জোট করার ইচ্ছা, পরিকল্পনা বা কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের নাই।”
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের আহ্বানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দুই বাম নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একথা বলেন।
নির্দলীয় সরকারের দাবিতে সম্প্রতি বিএনপিকে নিয়ে সমাবেশ করেছিলেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কামাল হোসেন ও এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
তাদের একসাথ হওয়া এবং সেই সমাবেশে হেফাজত নেতার উপস্থিতি তুলে ধরে তাদের সঙ্গে জোটে যাওয়ার সম্ভাবনা সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে নাকচ করেছিলেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
এরপর মঙ্গলবার এক সমাবেশে এই বামদের সঙ্গে এক সময় জোটবদ্ধ আন্দোলনের কথা স্মরণ করে তাদের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ঐক্যব্ধ হওয়ার আহ্বান জানান কাদের।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে এই সভায়ই ঐক্যের আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের
ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে এই সভায়ই ঐক্যের আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের
তিনি বলেন, “আজকে একটা বিষয় ভালো লাগছে যে, বামপন্থিরা এক সুরে কথা বলছে। সেটা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আমরা নেই- এই উচ্চারণ অনেকেই করেছে। তাহলে, এই উচ্চারণ যারা করেছেন, আসুন না আমরা মিনিমাম পয়েন্টে ম্যাক্সিমাম ইউনিটি গড়ে ফেলি, অসুবিধাটা কোথায়?”
এই ‘অসুবিধা’র বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক প্রিন্স বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনি ঐক্যের আহ্বানে যেসব বিষয় উল্লেখ করেছেন, তার সঙ্গে বর্তমান আওয়ামী লীগ নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ পুরোপুরি সাংঘর্ষিক অবস্থায় রয়েছে।
“উনি বলছেন, ঐক্য চাই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিজেই এখন সাম্প্রদায়িক শক্তিকে লালন করছে। স্বাধীনতার শত্রুদের বিরুদ্ধে ঐক্যের কথা বলেছেন। রাজাকারদের বিচার হয়েছি ঠিক, কিন্তু এখনও তাদেরকে নিষিদ্ধ করেনি।
“উনি বলেছেন, নষ্ট রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্য চান। আমরা তো দেখি নষ্ট রাজনীতি কিংবা দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির অন্যতম স্তম্ভে পরিণত হয়েছে এখনকার আওয়ামী লীগ।
“উনি বলতে চেয়েছেন যে ঐক্য চাই, দুর্নীতি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। কিন্তু এই সরকারের আমলে দুর্নীতি সন্ত্রাস আগের যে কোনো সরকারের চেয়ে অনেক বেশি ছড়িয়ে গেছে। আগে ছিল হাওয়া ভবন, এখন ঘরে ঘরে খাওয়া ভবন।”
“উনি ঐক্যের আহ্বান জানাতেই পারেন। কিন্তু সিপিবি এখন লড়াই করছে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে,” বলেন প্রিন্স।
সিপিবি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ ছিল। সোভিয়েত পতনের পর আওয়ামী লীগ বাজার অর্থনীতির দর্শন গ্রহণ করার পর সিপিবি ওই জোট থেকে বেরিয়ে বাম ফ্রন্ট গঠন করে। ওই বাম ফ্রন্টের দল ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে রয়েছে।
সিপিবি ও বাসদ এখন বাম গণতান্ত্রিক জোট নামে আরেকটি মোর্চা গঠন করেছে। ওই মোর্চায় রয়েছে আরও কয়েকটি বাম দল।
খালেকুজ্জামান (বাঁয়ে) ও রুহিন হোসেন প্রিন্স
খালেকুজ্জামান (বাঁয়ে) ও রুহিন হোসেন প্রিন্স
প্রিন্স বলেন, “দ্বিদলীয় জোটের বাইরে বাম বিকল্প শক্তি গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য। আমরা জনগণের ঐক্যের উপর ভরসা করি।”
বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, “আমরা নিজেরাই একটা জোটে আছি। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জোট করার ইচ্ছা, পরিকল্পনা বা কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের নাই।”
এ বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে কোনো কথা কিংবা যোগাযোগ হয়নি বলেও জানান তিনি।
দমন-পীড়ন বন্ধের দাবি বাম জোটের
দমন-নিপীড়ন, হয়রানিমূলক মামলা ও গ্রেপ্তার বন্ধ করে নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
মঙ্গলবার সিপিবি কার্যালয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদের সভায় গৃহীত প্রস্তাবে এ আহ্বান জানানো হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, “বিরোধীদের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন অব্যাহত রেখে সরকার আরেকটি একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। প্রধানমন্ত্রী বিদেশে বলে এসেছেন, দেশে নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ রয়েছে। অথচ তার সরকার দেশে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তারসহ নানাভাবে দমন-নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে।”
জোটের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে বৈঠকে ছিলেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, ক্বাফী রতন, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশীদ ফিরাজ, শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক।

No comments